নগরীর দৌলতপুরে বাবাকে হত্যার দায়ে
মেয়েসহ চারজনের নামে মামলা
# বাবাকে হত্যার দায় স্বীকার করে মেয়ের জবানবন্দী প্রদান
স্টাফ রিপোর্টারঃ নগরীর দৌলতপুরে বাবাকে হত্যার ৭ দিন পর দায় স্বীকার করে থানায় হাজির হয়েছে মৃত ব্যক্তির ছোট মেয়ে সুমাইয়া বিনতে কবির (১৬)। নানা নাটকের পর অবশেষে থানা পুলিশ সুমাইয়াকে আসামী করে মামলা গ্রহণ করেছে। আসামীর মা ফারজানা আফরিন বাদী হয়ে সোমবার দৌলতপুর থাানয় মামলা দায়ের করেন। মামলায় তারই ছোট মেয়ে সুমাইয়া বিনতে কবিরকে আসামী করা হয়েছে। মামলায় আরো ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। এদিকে হত্যার দায় স্বীকার করে মেয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। মামলায় কারণ দেখানো হয়েছে, পরস্পর যোগসাজসে একই উদ্দেশ্যে খাবার ও পানির মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতনপূর্বক বালিশ চাপা দিয়ে খুন করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছেন দৌলতপুর থানার এসআই বদিউর রহমান।
সুত্রে জানা যায়, গত ১২জুলাই সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে সুমাইয়া দৌলতপুর থানায় হাজির হয়ে নিজ মুখেই পিতা হত্যার দায় স্বীকার করে। সে জানিয়েছে দৌলতপুর বাজারের ঔষধের ফার্মেসি থেকে ১৮০ টাকা দিয়ে ১ পাতা ঘুমের ঔষধ কিনে খাবারের মধ্যে মিশিয়ে বাবাকে খাইয়ে দিয়েছি। তারপর বাবার বুকের উপর ওঠে বালিশ চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছি। তাছাড়া তার হাতেও কামড় দিয়েছে।
এলাকাবাসি সুত্রে জানা যায়, গত ৫ জুলাই দৌলতপুরস্থ দেয়ানা উত্তরপাড়ার বাসিন্দা শেখ হুমায়ুন কবির (৫২) মৃত্যু বরণ করেন। প্রতিদিনের ন্যায় রাতের খাবার খেয়ে তিনি তার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। সকালে তার স্ত্রী ও মেয়েরা ঘুম থেকে ডেকে তুলতে না পেরে নিশ্চিত হন তিনি মারা গেছেন। হুমায়ুনের মৃত্যুর খবরে আত্মীয় স্বজন ও এলাকার লোকজন ছুটে আসেন। তখন হুমায়ুনের হাতে কামড়ের দাগ, হাতে ও পড়নের লুঙ্গিতে রক্ত, সমস্ত শরীর নীল বর্ণ দেখে অনেকের সন্দেহ হয়। তার মৃত্যু নিয়ে নানা রকম গুঞ্জন শুরু হয়। প্রথম দিকে অনেকেই ধারণা করেছিলেন, তাকে হয়তো সাপে কেটেছে। সব জল্পনা কল্পনা উপেক্ষা করে পরিবারের সদস্যদের সম্মতিতে তার দাফন করা হয়। কিন্তু হুমায়ুনের বড় মেয়ে মরিয়ম পিতার এমন মৃত্যু কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না। সে কারণে তিনি ৯৯৯ ফোন করে পিতার মৃত্যুর রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশের সহায়তা চাইলেন। ফোন পেয়ে দৌলতপুর থানা পুলিশ হুমায়ুনের বাড়িতে ছুটে আসেন।
দৌলতপুর থানার তদন্ত ওসি শহিদুল ইসলাম জানান, ৫ জুলাই দেয়ানা উত্তর পাড়ায় হুমায়ুন করির নামে এক ব্যাক্তি মারা যান। তার বড় মেয়ে ৯৯৯ ফোন করে হুমায়ুনের মৃত্যুর ব্যাপারে জানান। আমরা মৃত হুমায়ুনের বাড়িতে যাই । গত ১২ জুন সকাল সাড়ে ১১ দিকে সুমাইয়া নামে এক কিশোরী থানার বারান্দায় এসে কান্না জড়িত কন্ঠে বলছিলেন, আমি আমার বাবা কে মেরে ফেলেছি- আমাকে সাজা দেন। তখন থানা পুলিশ কিশোরীকে সুমাইয়াকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে অপকটে তার পিতা হত্যার দায় স্বীকার করাসহ বিভিন্ন তথ্য দেয়।
তখন থানা কর্তৃপক্ষ কিশোরীর মা, বোনসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খবর দেয়। খবর পেয়ে সুমাইয়ার পরিবারের লোকজন থানায় আসেন তখন বিষয়টি তাদের কে জানানো হয়। থানার পক্ষ থেকে হুমায়ুনের ময়না তদন্তের জন্য পরিবারের সদস্যদের লিখিত অভিযোগ করতে বললে তারা চিন্তা ভাবনার জন্য সময় চেয়ে নেন । হুমায়ুনের ৩ কন্যা সন্তানের মধ্য সুমাইয়া ছোট। বিয়ের সুবাদে বড় মেয়ে শশুর বাড়িতে থাকেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, ৫ জুলাই মৃত শেখ হুমায়ুন কবির দৌলতপুরের দেয়ানা উত্তরপাড়ার মৃত শেখ ইসহাকের ছোট ছেলে। সে নামাজী, পরহেজগার, অত্যন্ত নম্র, ভদ্র, সদালাপি ও বিনয়ী মানুষ ছিলেন। কিন্তু তার ২ মেয়ে উশৃংখল জীবন যাপন করতেন। মেয়েদের উশৃংখল কর্মকান্ডে ও স্বাধীনতায় বাঁধা দেওয়ায় পিতাকে হত্যা করেছে এমনটি ধারনা এলাকাবাসীর।
হুমায়ুনের চাচাতো ভাই এস এম মঈনুল ইসলাম জানান, হুমায়ুন ভাইয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে সে স্ট্রক করে মারা গেছে। স্ট্রক করে যদি মারা যাবে তাহলে হাতের বাহুতে ২ টি ছিদ্র হলো কি করে। তার হাতের বাহুর ছিদ্র দেখে মনে হয় এটা অস্বাভাবিক মৃত্যু। এই মৃত্যুর সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হোক ও সত্য ঘটনা বেড়িয়ে আসুক এটা আমরা চাই। প্রতিবেশি শ্রমিক ইব্রাহিম শেখ জানান, হুমায়ুনের মৃত্যু স্বাভাবিক মনে হয়নি। তার হাতে দুটি ছিদ্র ছিলো, তার শরীরে আর কোন সমস্যা দেখা যায়নি। আশ পাশের লোকজন বলছে তাকে সিরিঞ্চ পুশ করে হত্যা করা হয়েছে। হুমায়ুনের পরিবারের সদস্যদের মাঝে কোন শোকের ছায়া ছিল না । ঐদিন তাদের দেখে মনে হয়নি বাড়িতে অভিভাবক মারা গেছে। তার মৃত্যুর রহস্য রয়েছে।
সুমাইয়া এই বছর দৌলতপুর মুহাসিন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পাশ করেছে। তার স্কুলের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম জানান, শিক্ষকদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি আমাদের বিদ্যালয় থেকে ২০২৪ সালে এস এস সি পাশ করে যাওয়া সুমাইয়া বিনতে কবির তার পিতা হুমায়ুন কবিরের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে এবং এই মৃত্যুর সাথে নাকি সুমাইয়া জড়িত। সুমাইয়ার স্কুলের শ্রেনী শিক্ষক সুমিতা মল্লিক আমার স্কুলে ৫ বছর যাবত পড়ালেখা করেছে তার ভিতর কখনো অস্বাভাবিক কিছু মনে হয়নি। শিক্ষকদের সাথে ভাল ব্যবহার করতো সালাম দিতো। তাছাড়া তাকে দেখে কখনো মানষিক সমস্যার রুগি বলে মনে হয়নি।
দৌলতপুর থানার অফিসার ইনচার্জ প্রবীর কুমার বিশ্বাস জানান, সুমাইয়ার কথা বার্তা অসংলগ্ন। একেক সময় একেক কথা বলছে। কখনো বলছে আমি বাবাকে হত্যা করেছি আবার কখনো বলছে আমার গাড়ে জ্বীন আছে । তাছাড়া তিনি বলেন, সুমাইয়ার মা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আসামী সুমাইয়াসহ চারজন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই বদিউর রহমান বলেন, আসামী সুমাইয়া সোমবার দুপুরে আদালতে স্বীকারোক্তীমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। আর নিহত হুমায়ুনের লাশ উত্তোলনের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়েছে।