নড়াইলের অরুণিমায় অতিথি পাখির মেলা
মোঃ খাইরুল ইসলাম চৌধুরী, নড়াইল
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাব। শীতকাল এলেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা মেলে অতিথি পাখির। দেশের যে কয়েকটি স্থানে বৃহৎ পরিসরে অতিথি পাখির উপস্থিতি দেখা যায় তার মধ্যে অন্যতম অরুনিমা। জেলা শহর থেকে প্রায় ৩১ কিলোমিটার দূরে নিভৃত পল্লীতে ২০০৯ সালে ৫০ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এই রিসোর্টটি যেন পাখিদের এক আপন রাজ্য। বছরের বারো মাসই এখানে দেখা মেলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশীও পাখির। আর নয় মাস থাকে বিদেশি পাখি। শীতের হাওয়া বইতেই ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখিরা ছুটে আসছে অরুণিমায়। দিন যত যাচ্ছে শীতের সাথে যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাখির সংখ্যা। দেখে মনে হবে যেন পাখির মেলা বসেছে। অরুনিমায় থাকা-খাওয়ার সু ব্যবস্থা থাকায় প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ভিড় করছেন অরুণিমায়।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সকালে খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়া নানান প্রজাতির অতিথি পাখিরা সন্ধ্যার আগেই রিসোর্টে ফিরতে শুরু করছে। ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসা এসব পাখিরা বসছে রিসোর্টের লেকের পাড়ে অবস্থিত ছোট-বড় গাছের ডালে। পাখিদের ডালে বসার নয়নাভিরাম দৃশ্য, ডানা ঝাপটানি ও কিচির মিচির শব্দের টানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমিরা। পাখি দেখতে নৌকা করে ছুটছেন কেউ কেউ। পড়ন্ত বিকালে লেকের পানিতে পড়া সূর্যের লাল আভা বাড়তি আনন্দ দিচ্ছে দর্শনার্থীদের। অনেকেই মুঠোফোনে বন্দী করছেন প্রাকৃতিক এসব দৃশ্য। অরুণিমার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ সবাই।
ফরিদপুর থেকে আসা আমিনুর ইসলাম বলেন, টিভির পর্দায় দেখেছেন এখানে অনেক পাখি দেখা যায়। দেখছেন অসংখ্য পাখির বিচরণ। বক, পানকৌড়িসহ বিভিন্ন প্রকারের দেশি বিদেশি পাখি। বিভিন্ন দিক থেকে যখন পাখিরা এসে এখানে পড়ে তখন পাখির যেই ডানা ঝাপটানি ও কিচিরমিচির কলরব এটা আসলে মনোমুগ্ধকর একটা পরিবেশ সৃষ্টি করে। এছাড়াও এখানকার থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থাও তার কাছে চমৎকার লেগেছে।
ঢাকা থেকে স্ব পরিবারে অরুণিমায় পাখি দেখতে আসা মেহদি হাসান বলেন, এখানে প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ, গ্রাম্য পরিবেশ ও শহুরে একটু আদলসহ সবকিছুই আছে। এতো এতো গাছপালা, এতো ফুল। আর বিশেষ করে পাখিটা খুব ভালো লাগছে। এতো পাখি আমি আসলে বাংলাদেশের কোথাও দেখিনি। পাখির যে কিচির-মিচির আওয়াজটা খুবই ভালো লাগছে। নৌকায় ঘুরে পাখি দেখা, রাতের বেলা ব্যাঙ, ঝিঁঝি ও জোনাকি পোকা তো সব মিলিয়ে ভালই লাগছে।
ঢাকা থেকে আসা কবির আলম বলেন, ঢাকা শহরে আমরা যারা বড় হচ্ছি বা জীবন-যাপন করছি, আমরা আসলে যান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে বড় হচ্ছি। মনোরম পরিবেশ বলতে যা বোঝায় তা ঢাকার মধ্যে পাওয়া যায় না। ঢাকার অদূরে নড়াইলের এতো সুন্দর একটা জায়গা যেখানে আমরা প্রচুর পাখি দেখতে পাচ্ছি। পাখিদের সাথে সময় পার করা বা দৃশ্যগুলো দেখা এবং আশেপাশের যে গাছ-গাছালি, পাখ-পাখালী তা দেখার মধ্যে একটা আনন্দ কাজ করে।
অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের ম্যানেজার মুনিব খন্দকার বলেন, এটি প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা একটি পূর্ণাঙ্গ রিসোর্ট। একটা রিসোর্টে যা যা থাকা প্রয়োজন তার সব সুযোগ-সুবিধা এখানে রয়েছে। এখানকার সবচেযে বড় বৈশিষ্ট্য এখানকার পাখি। প্রায় নয় থেকে দশ মাস এখানে বিভিন্ন দেশি এবং বিদেশি পাখির সমন্বয় ঘটে। এখানে নৌকায় করে পাখির খুব কাছে চলে যাওয়া যায়।
তিনি আরও বলেন, এখানে থাকার জন্য বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন কটেজ রয়েছে। তাদের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো এখানে যেসব খাবার পাওয়া যায় তার অধিকাংশ এখানেই উৎপাদিত। এছাড়াও আউটডোর-ইনডোর বিভিন্ন গেমস, সুইমিংপুল, লাইসেন্সকৃত বার রয়েছে। এখানে হারিয়ে যেতে বসা ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন খেলাধূলার আয়োজন করা হয়।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সদস্য ও অরুণিমা রিসোর্ট গলফ ক্লাবের চেয়ারম্যান খবির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে আর কোন রিসোর্ট নেই যেখানে এরকম পাখি দেখা যায়। পাখিকে ঘর দিতে হয়, নিরাপত্তা দিতে হয়। তারা এখানে নিরাপদ। আমরা চারদিক থেকে নিরাপত্তা দেই। পাখিরা এখানে নিরাপদ বোধ করে। ফলে অত্র এলাকাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লোক আসছে, এগুলো দেখছে। পুরো রিসোর্টে এমনভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ হয়ে আছে, বলা যায় আল্লাহর দান। যারাই আসে তারাই বলে এতো সুন্দর প্রকৃতি কোথাও নাই।