স্কুল-কলেজ বন্ধ, চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুই ও রংপুরে
একজন।
প্রভাত খুলনা: কোটা সংস্কার আন্দোলনরত এবং ছাত্রলীগের সংঘর্ষ
সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে সংঘর্ষে ঢাকায় দুইজন, চট্টগ্রামে তিনজন এবং রংপুরে একজন নিহত হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এছাড়া আগামী বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) অনুষ্ঠেয় সব বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত করা হয়েছে। ২১ জুলাই থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী পরীক্ষা যথারীতি চলবে। মঙ্গলবার মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই তথ্য জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরতদের ওপর সোমবারের হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ চলছে। তাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনরত এবং ছাত্রলীগের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে ঢাকাসহ সারাদেশে সংঘাত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত ঢাকায় দুইজন, চট্টগ্রামে তিনজন এবং রংপুরে একজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরতদের ওপর হামলার সোমবারের হামলার প্রতিবাদে সারাদেশে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ চলছে। তাতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঢাকা, বগুড়া, রাজশাহী ও চট্টগ্রামের চার জেলায় বিজিবি নামানো হয়েছে। হামলায় আহতদের মধ্যে কোটাসংস্কার আন্দোলন ও ছাত্রলীগের কর্মী ছাড়া সাংবাদিক ও পুলিশও সদস্য রয়েছেন।
চট্টগ্রাম : মঙ্গলবার বিকেল ৩টা থেকে নগরের মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট এবং ষোলশহরসহ আশেপাশের এলাকায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এর আগে দুপুর থেকে বিভিন্ন মোড়ে অবস্থা নেন ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা। দুই নম্বর গেট এলাকায় একটি বাস ভাঙচুর করে তারা। দফায় দফায় চলা সংঘর্ষে তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন, ওয়াসিম, ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ফারুক। এর মধ্যে ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজ শিক্ষার্থী। তিনি কক্সবাজারের পেকুয়া এলাকার বাসিন্দা। ফয়সাল আহমেদ শান্ত নগরের এমইএস কলেজের ছাত্র। পথচারীর ফারুকের বিস্তারিত পরিচয় জানা যায়নি। তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন। সবশেষ পাওয়া তথ্য মতে, ষোলশহর শিক্ষা বোর্ড এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলছে। মুরাদপুর অংশে অবস্থান নিয়েছে কোটা আন্দোলনকারীরা। দুই নম্বর ও ষোলশহর এলাকায় অবস্থান নিয়েছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এতে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হাতে রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র দেখা গেছে। কোটা আন্দোলনকারীরাও লাঠিসোটা নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন।
ঢাকা : রাজধানীর ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা এক যুবক (২৫) নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে গুরুতর আহত অবস্থায় ওই যুবককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসেন এক পথচারী। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের নিচে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই পথচারী তার নাম পরিচয় বলতে পারেননি। অজ্ঞাত ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী আকাশ মাহমুদ বলেন, আমরা তাকে ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে পেট্রোল পাম্পের সামনে পড়ে থাকতে দেখি। এরপর হাসপাতালে নিয়ে আসি। রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে মনির নামে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। তিনি শিক্ষার্থী নাকি পথচারী এ বিষয়টি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। মঙ্গলবার বিকেলে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে মনিরকে স্থানীয়রা মাটিতে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে পপুলার মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, সন্ধ্যা ৭টা পাঁচ মিনিটে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে পপুলার হাসপাতাল থেকে ঢামেকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছে।
রংপুর : মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর আড়াইটার দিকে রংপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাইদ নিহত হন। আবু সাইদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেরোবির ইংরেজি বিভাগের প্রধান আসিফ আল মতিন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ দুপুর ২টায় রংপুর খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং ফটকের সামনে আসেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাইদ নিহত হন। উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্তব্য করেন ‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধার নাতিপুতিরা কিছুই পাবে না, রাজাকারের নাতিপুতিরা সব পাবে?’ প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্যে ক্ষিপ্ত হন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। তারা ধরে নিয়েছেন ‘রাজাকারের নাতিপুতি’ তাদেরকেই বলা হয়েছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে এবং কোটা সংস্কারের এক দফা দাবিতে রোববার মধ্যরাত থেকে আন্দোলনে নামেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।