খুলনা মহানগরীতে ৩৪টি স্পটে চলে সুই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ : আসক্ত ৯৮৩ জন
খুলনা প্রতিনিধিঃ সুঁই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণকারীসহ নানা ধরনের মাদকসেবীর সংখ্যা উদ্বেগজনক মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ নেশার পরিণতি ভয়ঙ্কর। আসক্তদের ধুঁকে ধুঁকে মরতে হয়। বাঁচার কোনো পথ নেই। এর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিক হল, মাদকসেবীরা কয়েকজন মিলে একই সুঁই-সিরিঞ্জ ব্যবহার করায় তাদের শরীরে এইচআইভিসহ বিভিন্ন রোগ-জীবাণু সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। খুলনা মহানগরীতে ৩৪টি স্পটে ৯৮৩ জন সুই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহন করছেন। এই আসক্তদের মধ্যে একজনের এইচআইভি পজিটিভ পাওয়া যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইনজেকশন ব্যবহারকারী মাদক সেবনকারীরা খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে আছেন। বাংলাদেশে এইডস বিস্তারের অন্যতম কারণ, সুইয়ের মাধ্যমে মাদক গ্রহণের প্রবণতার আধিক্য। খুলনায় এ পদ্ধতিতে মাদক গ্রহণকারীর সংখ্যা ৯৮৩ জন। সুই ব্যবহারকারী এইডস রোগী থেকে ৭টি মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে এইচআইভি পজিটিভের বিস্তার হয়। মাধ্যমগুলো হচ্ছে, নারী যৌনকর্মী, হিজড়া, বান্ধবী, পুরুষ যৌনকর্মী, পেশাদার রক্তদাতা, সঙ্গী এবং স্ত্রী। ইঞ্জেকশন ব্যবহারকারী মাদক সেবনকারীদের বিপদজনক হিসেবে চিহ্নিত করার কারণ হচ্ছে, বিস্তারের গতিশীলতা, রক্ত বিক্রি, অনিরাপদ বাণিজ্যিক যৌনতা এবং হেপাটাইটিস বি ও সি বিস্তারে সহায়ক হওয়া। সুই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহন করার ব্যক্তিদের নিয়ে কাজ করা খুলনায় বেসরকারি একটি এনজিও নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইনজেকশন ব্যবহারকারী মাদক সেবনকারীদের পক্ষে একেবারেই মাদক থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হয় না। ফলে প্রাথমিক অবস্থায় ক্ষতি হ্রাস করতে হয়। প্রথমে মাদক সেবনকারীকে নিজের ব্যবহার করা ইনজেকশনের সুঁই অন্যদের সঙ্গে আদান-প্রদান না করার পরামর্শ দিতে হবে। এরপর বলতে হবে, ধোয়ার মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করতে পারো, কিন্তু ইনজেকশন নয়। এরপর তাকে মাদক গ্রহণ বন্ধ করার পরামর্শ দেই। ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক ব্যবহারকারীদের সুস্থ করে তুলতে কাউন্সিলিং, সিরিঞ্জ ও সুই সরবরাহ, এইচআইভি পরীক্ষা, হেপাটাইটিস পরীক্ষা, মাদকাসক্ত ও তার সঙ্গীদের কনডম সরবরাহ এবং লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান করার মাধ্যমে এ এইডস ছাড়ানোর এ ভয়াবহ মাধ্যমটি বন্ধ করা যেতে পারে। ওই এনজিওর মুল লক্ষ্য মাদকসেবীরা যাতে একই সিরিঞ্জ দিয়ে অন্যজন ব্যবহার বন্ধ করে, যাতে এইচআইভিসহ নানা রোগ মানুষের মধ্যে না ছড়াতে পারে। এ ধরনের মাদক সেবনকারীদের যৌন আচরণ সর্ম্পকে বলা হয়েছে, এরা বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীর সঙ্গে মিলিত হতে পারে, মাদকের আর্থ যোগানোর জন্যে যৌনকর্মে লিপ্ত হতে পারে এবং এদের মধ্যে কনডম ব্যবহারের প্রবণতা কম। তাই এসব মাদকাসক্তদের মাধ্যমে এইডস ছড়ানোর ঝুঁকি প্রবল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, খুলনা মহানগরীতে ৩৪টি স্পটে মোট ৯৮৩ জন সুই-সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ করে থাকেন। এর মধ্যে একটি উপজেলায় রয়েছে ৯টি স্পট। এসব মাদকসেবাীদের ২০-২৪ বছরের মধ্যে ব্যক্তি ২২ জন, ২৫-৩৯ বছর বয়সী আছে ৬৯৭ জন, ৪০-৫০ বছরের ২৪৬ জন এবং ৫০ বছরের উপরে এমন ব্যক্তি রয়েছেন ১৮ জন। এই মাদক সেবনকারীর মধ্যে ২০২১ সালে এক ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে এইচআইভি পজিটিভ শনাক্ত হয়। খুলনা মহানগরীর সিরায় সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে মাদক গ্রহণকারীর উল্লেখযোগ্য স্পটগুলো হচ্ছে নগরীর রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, ট্রাকটার্মিনাল এবং পুরাতন রেলস্টেশন। আসক্তদের মধ্যে দিনমজুরি, টোকাই, ছাত্র ও চাকরিজীবিরা রয়েছে। প্যাথেডিন ও লুপিজেসিক ইনজেকশন নেশাখোরদের প্রধান আকর্ষণ। এছাড়া রয়েছে সিডিল, টিডি জেসিক ও নেলবন ইনজেকশন অন্যতম। কারণ অন্য মাদকের চেয়ে এসবের দাম কম। এজন্য ছিন্নমূল মাদকাসক্তদের এ নেশার প্রবণতা বেশি। নেশা জাতীয় ইনজেকশন নেলবন ৭০-৭৫ টাকা। মাদকসেবীদের কাছে এসব চাহিদা বেড়ে গেলে ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওষুধ ফার্মেসীরা বিক্রি করছেন। দিনে কেউ কেউ ৩-৪ বার সুই-সিরিঞ্জ দিয়ে শিরার মাধ্যমে এসব মাদক গ্রহন করেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ব্্েরইন এণ্ড মাইন্ড স্পেশিয়ালিষ্ট (সাইকিয়াট্রিষ্ট) ডা: মোহাম্মদ হাসান বলেন, মাদকের কড়াল গ্রাসে ঢাকা পড়ছে যুব সমাজ এবং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এবং হারিয়ে যাচ্ছে অসংখ্য মানুষের প্রাণ। শিরায় মাদক যারা নেন, তাদের বিভিন্ন ধরনের মাদক সম্পর্কিত সমস্যা পাশাপাশি বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাও দেখা যায়। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীরা নানান রকম মানসিক সমস্যাও আক্রান্ত হন। দেখা গেছে, শিরার মধ্যে নেওয়া প্যাথেডিন অনেক সময় তিনজন মাদকসেবী ভাগ করে নিচ্ছেন। ফলে একজনের শরীর থেকে আরেকজন শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে নানান রোগ। এইডস ছড়ানোর ক্ষেত্রে এই ধরনের মাদকসেবীরা বিশেষ ভুমিকা রাখছেন। অন্যদিকে হেপাটাইটিস বি, সি এবং অন্যান্য সংক্রমক ব্যধি একে অপরের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে এই একই সুই অথবা একই ইনজেকশন কয়েকজন মাদকসেবী একত্রে ব্যবহার করবার জন্য এবং এই শিরায় যেসব ইনজেকশনগুলো দ্বারা নিচ্ছেন তার ফলে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগুলো হচ্ছে শিরার স্বাভাবিক গতিপথ। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, শিরায় নেওয়া মাদকের কারণে তারা নিজের অজান্তেই দীর্ঘ মেয়াদী নানান রকম অসুস্থতা এবং জটিলতায় আক্রান্ত হচ্ছেন। বেশি দেখা যাচ্ছে এসব তরুন বয়সী বিভিন্ন্ ছেলেদের মধ্যে। একই সাথে সুইয়ের মাধ্যমে ইনজেকশন পুশের মাধ্যমে যাতে মাদক সেবন না করে সেদিকে সচেষ্ট হতে হবে। একই সুই যাতে বারবার ব্যবহার না করে, একি সুই যাতে দু’-তিনজন ব্যবহার না করে সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এগুলো নিয়ে আরও জনসম্পক্তৃতা প্রয়োজন, আরো বেশি মানুষকে জানানো প্রয়োজন, জনসচেতনতা প্রয়োজন এবং অবশ্যই অবশ্যই এসব সচেতনতার মাধ্যমে মাদকের করাল গ্রাসকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে এবং প্রতিরোধের মাধ্যমে কেবলমাত্র আমাদের আগামী প্রজন্মতে সুরক্ষিত রাখা যাবে।
খুলনা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: মিজানুর রহমান বলেন, নগরীর বিভিন্ন স্পটে গ্রেফতার করা হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের। ফুটপাতের যারা মাদকের সঙ্গে জড়িত তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে। কেউ রেহাই পাবে না। তিনি বলেন, টোকাইরা বেশি সিরিঞ্জের মাধ্যমে মাদক গ্রহন করে বলে