এ পর্যন্ত বিভাগে ডেঙ্গু রোগী ছাড়াল ২৬৫ : মৃত্যু ১
কামরুল হোসেন মনি ঃ ডেঙ্গু গেল বছর যে ভয় ছড়িয়েছে, তা এখনও ভোলেনি মানুষ। বছর ঘুরে আবার চলে এসে মশা বিস্তারের মৌসুম। এবার বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে খুলনায় বেশি চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। এই জেলার মধ্যে রূপসায় এবার ডেঙ্গু প্রকট আকার ধারন করতে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত খুলনায় ৮৮ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে রূপসায় ভর্তি হয় ৬৮ জন। খুলনা বিভাগের গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৫ জন। এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি সংখ্যা ২৬৫ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে খুলনায় ৮৮ জন। গত বছর ডেঙ্গুতে দেশে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যু হয়েছে। এবার ডেঙ্গু পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। গত বছর দেশে ডেঙ্গু রোগে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ১ হাজার ৭০৫ জন। ইনজেকশনযোগ্য স্যালাইনের অভাবের কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছিল। তবে এ বছর যাতে ফের স্যালাইন সংকট না হয় সেজন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ বৈঠক করেছে। ওষুধটির স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারি হাসপাতালে ইনজেকশনযোগ্য স্যালাইনের মজুত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি গত বারের তুলনায় আরও খারাপ হবে বলে মনে হচ্ছে।
খুলনা সিভিল সার্জন ডা: শেখ সফিকুল ইসলাম বলেন, খুলনায় এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। মোট ৮৮ জন। এর মধ্যে খুলনার রূপসা উপজেলায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৬৮ জন। যা অন্য জেলার থেকে কয়েগুন বেশি। তিনি বলেন, গত বছরেও রূপসায় ডেঙ্গু রোগী বেশি ছিলো। এবারও তাই। তিনি বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা ছাড়া কোন উপায় নেই। সকলকে ডেঙ্গু প্রতিরোধে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। বর্তমানে ডেঙ্গুর পরীক্ষার কিট ও এনএস স্যালাইনের আপাতত কোন সংকট নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিস সূত্র মতে, ১ জানুয়ারি থেকে ১৬ জুলাই (মঙ্গলবার) পর্যন্ত খুলনায় মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে ৮৮ জন। এর মধ্যে রূপসায় ভর্তি হয় ৬৮ জন। এছাড়া খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১৩ জন, ফুলতলায় ২ জন, পাইকগাছায় ১ জন, বটিয়াঘাটায় একজন ভর্তি হয়েছে। ওই রিপোর্টে দেখা গেছে গত মে মাস থেকে খুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে। ওই মাসে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৮ জন। এর আগে জানুয়ারি মাসে ভর্তি ছিলো ১১ জন। এরপর জুন মাসে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৪৩ জন এবং গতকাল ১৬ জুলাই পর্যন্ত খুলনায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ২০ জন।
খুলন বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত গত একদিনে খুলনা বিভাগের ৩ জেলায় নতুন করে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৫ জন। এর মধ্যে খুলনায় একজন, নড়াইলে ২ জন এবং মেহেরপুরে ২ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়। এ পর্যন্ত খুলনা বিভাগে মোট ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ২৬৫ জন এবং মৃতৃ্যু একজনের। এর মধ্যে খুলনায় ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৮৮ জন, বাগেরহাটে ৬জন, সাতক্ষীরায় ৪ জন, যশোরে ১৭ জন এবং মুত্যু ১ , ঝিনাইদহ ১৬ জন, মাগুরায় ৩ জন, নড়াইলে ৫৭ জন, কুষ্টিয়ায় ৬ জন, মেহেরপুরে ২৬ জন, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৩ জন এবং সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৯ জন। বর্তমানে খুলনা বিভাগের সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছে ১৬ জন এবং রেফার্ড করা হয় ২ জনকে। এ সময়ের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৪৬ জন। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র মতে, গত বছর ৪ অক্টোবর পর্যন্ত খুলনা বিভাগে ডেঙ্গু রোগীর ভর্তি ছিলো ১৬ হাজার ২৩৬ জন। ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছিল মোট ৪৮ জনের। মারা যাওয়ার মধ্যে খুমেক হাসপাতালে ১৩ জন, খুলনায় ২ জন, বাগেরহাটে ১ জন, সাতক্ষীরায় ১ জন, যশোরে ১০ জন, মাগুরায় ৩ জন, কুষ্টিয়ায় ৯ জন, ঝিনাইদহে ৩ জন, নড়াইলে ১ জন, এবং সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৬ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। ডেঙ্গু ঠেকাতে এবার মাস্টারপ্ল্যান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের : সাত বছরমেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ডেঙ্গুমুক্ত করতে জাতীয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ কৌশল (২০২৪-২০৩০) হাতে নিয়েছে সরকার। এ পরিকল্পনার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ও এ রোগে মৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমিয়ে আনা। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা সাত বছরমেয়াদি এই পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ডেঙ্গু রোগের সংক্রমণ কমিয়ে আনা হবে। প্রতি ১ হাজার মানুষের মধ্যে সর্বোচ্চ একজন আক্রান্ত হবে। আর এ রোগে মৃত্যুর হারও কমিয়ে আনা হবে ০.১ শতাংশে। অর্থাৎ প্রতি ১ হাজার রোগীর মধ্যে সর্বোচ্চ একজনের মৃত্যু। গত বছর ডেঙ্গু ভয়াবহ প্রকোপের পর এ উদ্যোগ নিল সরকার। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের তথ্যমতে, গত বছর ৩ লাখ ২১ হাজার জনেরও বেশি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মারা যান ১ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি মানুষ। সে হিসাবে মৃত্যুর হার ০.৫৩ শতাংশ। এ বছরও ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।