রাজস্ব বিভাগ থেকে ওএসডি,সোনালী ব্যাংকের পরিচালকের পদ থেকেও অব্যাহতি।
রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা মতিউর রহমান কীভাবে এত সম্পদশালী হলেন? তার প্রভাবের উৎস কী? এ নিয়ে এখন সর্বত্রই আলোচনা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিন প্রভাবশালীর প্রশ্রয়ে তিনি এই বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক হয়েছেন। তাদেরও তদন্তের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন অনেকে। এদিকে গতকাল রবিবার রাজস্ব বিভাগ থেকে ওএসডি করা হয়েছে মতিউর রহমানকে। পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে তার দুর্নীতির অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
প্রখ্যাত সাংবাদিক আব্দুল গাফফার চৌধুরী মৃত্যুর আগে এক কলামে লিখেছিলেন, ‘নব্য আওয়ামী লীগ সেজে বহু স্বাধীনতাবিরোধী সুবিধা ভোগ করছে। এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে একসময় ভুগতে হবে।’ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মতিউরের বাবা যেমন রাজাকার ছিলেন, তার প্রথম স্ত্রীর বাবাও ছিলেন রাজাকার। অথচ তিনি এখন আওয়ামী লীগের হয়ে নরসিংদীর রায়পুরার উপজেলা চেয়ারম্যান। আবার যে তিন প্রভাবশালী তাকে প্রশ্রয়ে দিয়েছেন, তাদের এক জনের বাবাও রাজাকার। এরা সবাই একত্র হয়ে এখন আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়ে গেছেন। অনেকেই প্রশাসনে এমন ছদ্মবেশীদের খুঁজে বের করার দাবি তুলেছেন।
মতিউরকে প্রশ্রয় দেওয়া তিন প্রভাবশালীর এক জন ক্ষমতাধর সচিব। এক জন প্রশাসন ক্যাডারের অত্যন্ত প্রভাবশালী কর্মকর্তা। আরেক জন বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্যতম শীর্ষ পদে আছেন। তার বদৌলতেই মতিউর সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হন। অন্য প্রভাবশালী হলেন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অন্যতম শীর্ষ কর্মকর্তা। যিনি শিক্ষকতা থেকে এখানে এসেছেন। তার কাছ থেকেই বিশেষ সুবিধা পেয়ে মতিউর প্লেসমেন্ট শেয়ারের কারসাজি করে হাজার হাজার কোটি টাকা অবৈধভাবে হাতিয়ে নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের একজন সিনিয়র নেতা এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলছিলেন,প্রশাসনের মধ্যে থাকা এসব মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকর্তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে তালিকা তৈরি করে মুখোশ উন্মোচন করা দরকার। এরাই মাঝেমধ্যে সংকট তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীকে বিব্রত করেন। এসব পরিস্থিতি সামাল দিতে প্রধানমন্ত্রীকে বেগ পেতে হয়।’
এনবিআর থেকে ওএসডি, সরানো হলো সোনালী ব্যাংক থেকেও: কোরবানির আগে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমানকে বর্তমান দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে তাকে। গতকাল রবিবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে এসব তথ্য জানানো হয়। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মকিমা বেগম সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট মো. মতিউর রহমানকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল সোনালী ব্যাংকের বোর্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মতিউরকে। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী এ তথ্য জানিয়েছেন। গতকাল পর্ষদ সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন তিনি।
জিয়াউল হাসান সিদ্দিকী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মতিউর রহমান আর সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ সভায় আসবেন না। সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সবাইকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের পর্ষদ কোনো পরিচালককে নিয়োগ দিতে পারে না, আবার কাউকে পর্ষদ থেকে বাদ দিতেও পারে না। ব্যাংকের মালিক হিসেবে সোনালী ব্যাংকের পর্ষদে পরিচালক নিয়োগ দেয় সরকার। আবার কাউকে বাদ দিতে চাইলে সেটাও করে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আর কখনো মতিউর রহমান আমাদের পর্ষদ সভায় আসবেন না।’
পঞ্চম বারের মতো মতিউরের দুর্নীতির অনুসন্ধানে দুদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) এবং ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মতিউর রহমানের অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল রবিবার দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। একই সঙ্গে তার দুর্নীতি অনুসন্ধানে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিশনের উপপরিচালক আনোয়ার হোসেনকে অনুসন্ধান দলের প্রধান করা হয়। এছাড়া দলের অন্য দুই সদস্য হলেন সহকারী পরিচালক মাহমুদ হাসান ও উপ-সহকারী পরিচালক সাবিকুন্নাহার।
দুদক সচিব বলেন, এনবিআরের সদস্য ড. মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগে গত ৪ জুন কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদকের ৪ জুনের সভায় সংস্থার মহাপরিচালক (মানিলন্ডারিং) মো. মোকাম্মেল হক অভিযোগ উপস্থাপন করেন। এতে বলা হয়, মো. মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অ