দলের দুই গ্রুপের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষে গুরুতর আহত রাজশাহীর বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল (৫০) মারা গেছেন। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বুধবার (২৬ জুন) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি মারা যান।
হাসপাতালের আইসিইউ ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘মাথায় গুরুতর জখম হয়েছিল বাবুলের। এ জন্য প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছিল। হাসপাতালে আনার পর অস্ত্রোপচার করেই তাঁকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। সেখানে জখমের স্থানে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল। তাই তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’
এর আগে ২২ জুন বাঘা উপজেলা সদরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়ান আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের নেতা–কর্মীরা। এতে উভয় পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। তাঁদের মধ্যে বাবুলের অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন।
স্থানীয়রা জানান, জমির দলিল রেজিস্ট্রির সময় দিনের পর দিন বাড়তি টাকা আদায় করে আসছে বাঘা উপজেলা দলিল লেখক সমিতি। উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশ সমর্থন দিয়ে থাকে এই সমিতিকে। আর অন্য একটি অংশ দলিল লেখক সমিতির এই দৌরাত্ম্যের বিপক্ষে। দলিল লেখক সমিতিকে সমর্থন দেওয়া বা না দেওয়ার দ্বন্দ্বেই গত শনিবার (২২ জুন) সংঘর্ষে জড়ায় দুই পক্ষ।
১৯ জুন দলিল লেখক সমিতির নতুন কমিটির সভাপতি হিসেবে উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি শাহিনুর রহমান পিন্টু ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শামিউল আলম নয়ন দায়িত্ব নিতে যান। সেদিন সাধারণ দলিল লেখকেরাই অতিরিক্ত টাকা আদায়ের প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এর প্রতিবাদে পরদিন ২০ জুন দলিল লেখকদের একাংশ মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করে। এই মানববন্ধনে একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক লায়েব উদ্দিন লাভলু; পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আক্কাস আলী এবং পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেরাজুল ইসলাম। কর্মসূচিতে তাঁরা দলিল লেখক সমিতির নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় বন্ধ করার দাবি জানান।
পরে ২২ জুন দলিল লেখক সমিতির দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবিতে বাঘা উপজেলার সচেতন নাগরিকের ব্যানারে উপজেলা চেয়ারম্যান লাভলু, পৌর মেয়র আক্কাস আলী ও ইউপি চেয়ারম্যান মেরাজুলের সমর্থকেরা বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করেন। পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে একই দিন বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ তুলে মানববন্ধনের ডাক দেয় বাঘা উপজেলা আওয়ামী লীগ। পাল্টাপাল্টি এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে আগের দিনই উত্তেজনা দেখা দেয়। ২২ জুন কর্মসূচির জন্য দুই পক্ষের কর্মী-সমর্থকেরা উপজেলা চত্বরে জড়ো হলে তাঁদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে দুই পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন। এঁদের মধ্যে গুরুতর জখম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম বাবুল চার দিন পর মারা গেলেন। বাবুল পৌর মেয়র আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে আয়োজন করা মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন।
সংঘর্ষের ঘটনায় সেদিন রাতেই থানায় মামলা করেছেন উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি পিন্টু। এ মামলায় বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীসহ ৪৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় পুলিশ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার হয়ে ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ নেতা মেরাজুল ইসলাম এখন কারাগারে রয়েছেন। গ্রেপ্তার এড়াতে মেয়র আক্কাস আত্মগোপনে।
বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সংঘর্ষের দিন আশরাফুল ইসলাম বাবুলকে কুপিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন। এখন মরদেহের ময়নাতদন্ত করা হবে। মারামারির ঘটনায় যে মামলাটি হয়েছিল, সেই মামলাটিই এখন হত্যা মামলায় রূপ নেবে।’