সাইদুল করিম মিন্টু
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুকে ৮ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে নেওয়ার তৃতীয় দিনে গত রবিবার মিন্টুকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার একটি মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালতে নেওয়া হলেও মিন্টু ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেননি।
এ ঘটনায় কেউ বলছেন, ওপরমহলের চাপে মিন্টুকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়। কেউ বলছেন, মিন্টুর মুখ থেকে রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে আসায় বিব্রত পুলিশ। তবে পুলিশের দাবি, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে তাকে পুনরায় আদালতের মাধ্যেমে আবারও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
এ ঘটনায় কেউ বলছেন, ওপরমহলের চাপে মিন্টুকে আদালতে হাজির করে কারাগারে পাঠানো হয়। কেউ বলছেন, মিন্টুর মুখ থেকে রাঘব বোয়ালের নাম বেরিয়ে আসায় বিব্রত পুলিশ। তবে পুলিশের দাবি, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে তাকে পুনরায় আদালতের মাধ্যেমে আবারও রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
নাম প্রকাশ না করে ডিএমপির এক কর্মকর্তা প্রভাত খুলনা কে বলেন, মিন্টুকে যে দিন গ্রেপ্তার করা হয়, ওই দিন তিনি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী এক নেতার বাসায় ছিলেন। পরে ওই নেতার নির্দেশে মিন্টু বাসার নিচে নেমে এলে তাকে আটক করে গোয়েন্দা কার্যালয়ে আনা হয়। এরপর থেকে ওপরমহল থেকে মিন্টুকে সাবধানতার সঙ্গে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চাপ ছিল। নিহত আনারের মেয়েও মিন্টুকে ছাড়িয়ে নিতে ওপর থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। বিষয়টি নিয়ে দোটানায় পড়েন তদন্তকারী সংস্থার কর্মকর্তরা। তবে রিমান্ডে থাকা অবস্থয় মিন্টুর কাছ থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে বলে জানান তিনি।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় মিন্টু কোনোভাবেই মুখ খুলছিলেন না। পরে প্রযুক্তিগত তথ্য-প্রমাণ হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর একপর্যায়ে সবকিছু স্বীকার করে গোয়েন্দাদের আদ্যপান্ত জানান। এ ছাড়া আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়া গ্যাসবাবুও মিন্টুর জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য দেন। মূলত ঝিনাইদহ-৪ আসনে এমপি হওয়ার লোভে পড়ে নেপথ্যে থাকা একটি বড় শক্তির ইন্ধনে তিনি এই খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন।
গোয়েন্দা পুলিশের অপর এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খুনের মূল কারণ সোনা চোরাচালান ও হন্ডি ব্যবসা। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা, যশোর ও ঝিনাইদহের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে চোরাচালানের টাকার ভাগ-বাঁটোয়ারার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন আনার। আর এ কারণে তারা আনারকে সরিয়ে দেওয়ার পথ খুঁজছিলেন। একপর্যায়ে এই সিন্ডিকেটের নজরে পড়ে আনারের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মিন্টুর দ্বন্দ্বের বিষয়টি। তারা মিন্টুকে আনারের আসনে এমপি বানানোর লোভ দেখান। মিন্টুও তাদের ফাঁদে পা দেন। দফায় দফায় তাদের সঙ্গে মিন্টুর বৈঠক হয়। একপর্যায়ে খুনের দায়িত্ব নেন মিন্টু।
ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে, মূলত চোরাচালানের দ্বন্দ্ব হলেও খুনে ব্যবহার করা হয়েছে রাজনৈতিক শত্রুতা। এতে ফায়দা লুটেছে ওই চোরাচালান সিন্ডিকেট।
পুলিশ সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় মিন্টুর কাছে বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছেন গোয়েন্দারা। প্রথমত, মিন্টুর মোবাইলে আনারের নিথর দেহের ছবি কীভাবে এলো। একই সঙ্গে গ্যাসবাবুর তিনটি মোবাইল তিনি কেন নিজের হেফাজতে রাখলেন। এ ছাড়া গ্যাসবাবুর জবানবন্দিতে চুক্তি অনুযায়ী খুনের টাকা মিন্টুর পরিশোধের কথা কেন এলো? এটিও জানতে চাওয়া হয়। এসব প্রশ্নে নিশ্চুপ থেকেছেন মিন্টু। পরে মিন্টু ও গ্যাসবাবুর মোবাইল ফোন ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। এরই মধ্যে গ্যাসবাবুর মোবাইলের ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া গেছে। সেখানে মিন্টুর সঙ্গে কথোপকথন ও বার্তা আদান-প্রদানের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে মিন্টুর মোবাইল ফোনের ফরেনসিক রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায়নি। মিন্টুর মোবাইল ফোনের ফরেনসিক রিপোর্ট পাওয়া গেলে এবং সেখান থেকে এই খুনের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে আবারও গ্যাসবাবু ও মিন্টুকে রিমান্ডে আনা হতে পারে বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) একটি সূত্র দাবি করেছে।
ডিবির একটি সূত্র বলছে, আট দিনের রিমান্ডের তৃতীয় দিনে মিন্টুর কাছ থেকে