খুলনা জেলা পরিষদের কর্মকর্তার হাতে যমুনা
টেলিভিশনের সাংবাদিক রাশেদ নিজাম লাঞ্ছিত
স্টাফ রিপোর্টারঃ খুলনায় জেলা পরিষদের দোকান বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের ঘটনায় অনুসন্ধান করতে গিয়ে লাঞ্ছিত হয়েছেন ঢাকায় কর্মরত যমুনা টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি রাশেদ নিজাম (৩৬)। সোমবার দুপুরে জেলা পরিষদ কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহবুবর রহমান তার ওপর এ হামলা চালান। রাশেদ নিজাম এ ঘটনায় খুলনা সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মতার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। রাশেদ যমুনা টেলেভিশনের ‘থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি’ অনুসন্ধানী টিমে কাজ করেন। সাংবাদিক রাশেদ নিজাম জানান, খুলনার চুকনগরে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো ছিল। সেই ডাকবাংলা ভেঙে ৫৬ শতক জায়গা প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নামে একসনা বন্দোবস্ত দিয়ে ছাদযুক্ত স্থায়ী পাকা মার্কেট নির্মাণ করা হচ্ছে। সেখানে দোকান বরাদ্দ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। যার বড় অংশের সঙ্গে খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহবুবর রহমান জড়িত রয়েছেন -এমন অভিযোগ জানতে পারি। গতকাল সোমবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি ও তার ক্যামেরাপারসন নির্মল কুমার গাইন বিষয়ে বক্তব্য নেওয়ার জন্য নগরীর কেডি ঘোষ রোডস্থ জেলা পরিষদে তার কক্ষে সাক্ষাৎকার নিতে যান। মাহবুবর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি সাংবাদিক রাশেদ ও তার ক্যামেরাম্যানকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে দেন। ক্যামেরার মেমোরি কার্ড ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তিনি অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করে তাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেন। সাংবাদিক লাঞ্ছনার খবর পেয়ে খুলনার কর্মরত সাংবাদিকরা সেখানে যান। সাংবাদিক রাশেদ নিজাম ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, অভিযোগ উঠলে যে কারো আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ রযেছে। কিন্তু তিনি উল্টো আমাকে ও আমার ক্যামেরা পারসনকে হুমকি ও লাঞ্ছিত করেছেন। এ বিষয়ে খুলনা জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এস এম মাহবুবর রহমান বলেন, সাংবাদিক কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই ভিডিও ও বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু ওই বিষয়ে আমি কথা বলতে চাইনি। লাঞ্ছনা ও হুমকির অভিযোগ সঠিক নয়। বিষয়টি সম্পর্কে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ বলেন, ঘটনার সময় আমি পরিষদে ছিলাম না। কোন ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি দ্রুত ফোনটি কেটে দেন। এ ব্যাপারে খুলনা জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা রশীদ বলেন, সেখানে দোকান ঘর নির্মাণে শর্ত ভঙ্গ করে অনিয়ম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পেয়েছি। যার প্রেক্ষিতে সার্ভেয়ারকে চিঠি দিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছি। তিনি প্রতিবেদন দিলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। এ ব্যাপারে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামাল হোসেন খান জানান, সাংবাদিকদের মাধ্যমে বিষয়টি আমরা জেনেছি। একটি জিডিও হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উল্লেখ্য, গত ২৭ জুন দৈনিক দেশ রূপান্তর পত্রিকায় ‘একসনা ইজারায় স্থায়ী পাকা মার্কেট’ শিরোনামে এবং ‘শর্ত লঙ্ঘন করে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি’ ও ‘২০ কোটি টাকা হাতানোর অভিযোগ’ উপ-শিরোনামে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশিত হয়।